আকতারুল ইসলাম আকাশ, ভোলা ॥ মহানবী (সঃ) ও বিবি ফাতেমা (রাঃ)কে কটুক্তি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে ভোলার বোরহানউদ্দিনে সাধারণ তৌহীদি জনতার সাথে পুলিশের সংঘর্ষে কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ চার মুসল্লী নিহত হয়েছে।
এঘটনায় পুলিশ সদস্য, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ প্রায় দুই শতাধিক মুসল্লী আহত হয়। আহতদের মধ্যে ভোলা সদর হাসপাতালে ৪৮ জন, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে গুরুতর আহত প্রায় ৫৩ জন ও বাকীদের বোরহানউদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রবিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে বোরহানউদ্দিন উপজেলায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভোলায় অতিরিক্ত পুলিশ, কোস্টগার্ড ও চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। নিহতরা হলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলার মানিকারহাট এলাকার মহিউদ্দিন পাটওয়ারীর মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলে মাহবুব (১৪), উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দেলওয়ার হোসেনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে শাহিন (২৩), বোরহানউদ্দিন পৌর সভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ (৪৫), মনপুরা হাজিরহাট এলাকার বাসিন্দা মিজান (৪০)।
এদিকে এ সংঘর্ষের ঘটনায় বিকেলে ভোলা প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেছে সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদ। সভা থেকে তারা ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ও বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনামুল হকের প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবি করেন।
দাবিগুলো হলো নবীকে নিয়ে কটুক্তিকারী বিপ্লব চন্দ্র শুভ এর ফাঁসি দিতে হবে, নিহতদের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে হবে, নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ, আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসা দেয়া, গ্রেফতারকৃত সকল মুসল্লীদের নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে। এসময় বক্তব্য রাখেন সর্বদলীয় মুসলিম ঐক্য পরিষদের ভোলা জেলার আহবায়ক মাওলানা বশির উদ্দিন, সদস্য সচিব মাওলানা তাজউদ্দি, যুগ্ম সদস্য সচিব মাওলানা মিজানুর রহমানসহ আর অনেকে।
জানা যায়, গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের ম্যাসেঞ্জার রসুল (সঃ), বিবি ফাতেমা (রাঃ)কে নিয়ে বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ২নং ওয়ার্ডের চন্দ্র মোহন বৈদ্দের ছেলে বিপ্লব চন্দ্র শুভ তার ফেসবুক বন্ধুদের কাছে কূরুচিপূর্ণ ম্যাসেজ পাঠায়। এ নিয়ে রবিবার বেলা ১১টার দিকে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে সর্বস্তরের তৌহীদি জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলে আয়োজন করা হয়। এ বিক্ষোভ মিছিলটি না করার জন্য বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা জালাল উদ্দিন, বাজার মসজিদের ইমাম মাওলানা মিজানকে পুলিশ অনুরোধ করে। এবং সাধারণ মানুষ আসার আগে বিক্ষোভটি বন্ধ ঘোষণা করতে বলেন। তাদের অনুরোধে এ দুই ইমাম সকাল ১০টার দিকেই উপস্থিত মুসল্লীদের নিয়ে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে বিক্ষোভ সমাবেশটি সমাপ্ত করেন। কিন্তু এতক্ষণে বোরহানউদ্দিনের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজার হাজার লোক এসে ঈদগাহে জড়ো হয়। এক পর্যায়ে তারা ওই দুই ইমামের উপর ক্ষিপ্ত হয় এবং সেখানে থাকা পুলিশের সদস্যের উপর চড়াও হয়। পুলিশ আত্মরক্ষার্তে ওই মসজিদের ইমামের রুমে আশ্রয় নেয়। এক পর্যায়ে উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। তারা নিজেদের বাঁচানোর জন্য উত্তেজিত মুসল্লীদের উপর ফাকা গুলি ছুড়ে। এতে সেখানে থাকা মুসল্লীরা আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশের উপর আক্রমন চালায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর এক টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশের সাথে মুসল্লীদের সংঘর্ষ হয়। এতে চার মুসল্লী নিহত হয়েছে। পুলিশ সদস্যসহ প্রায় দেড় শতাধিক মুসল্লী আহত হয়। এদের মধ্যে অনেককে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এবং বাকীদের বোরহানউদ্দিন ও ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক জন মাদ্রাসা ছাত্র ও আরেক জন কলেজের ছাত্র বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো জেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রনে বোরহানউদ্দিনে অতিরিক্ত পুলিশ, কোস্টগার্ড ও চার প্লাটুন বিজেবি মোতায়োন করা হয়েছে।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়ছার বলেন, বোরহানউদ্দিন উপজেলার বিপ্লব চন্দ শুভ নামের এক যুবকের ফেইসবুক আইডি হ্যাককে কেন্দ্র করে গত ১৮ তারিখে বোরহানউদ্দিন থানায় জিডি হয়। এটিকে কেন্দ্র করে আজকে বোরহানউদ্দিন ঈদগাহ মাঠের সমাবেশ পুলিশ মোতায়েন ছিলো। সকাল ৯টা থেকেই মাঠে মানুষ জমায়েত হওয়া শুরু হয়। আমরা এ সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে যখন নেমে আসি তখন উত্তেজিত জনতা আমাদের উপর আক্রমন করে। পরে আমরা আত্মরক্ষার্থে পাশের একটি মাদ্রাসার রুমে গিয়ে অবস্থান নিলে তারা সেখানে গিয়েও আমাদের উপর আক্রম করে। এতে আমাদের অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়। এমনকি এঘটনায় আমাদের এক পুলিশ সদস্যের বুকে গুলি লাগে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার সিএমএইচএ পাঠানো হয়েছে। পরে আমরা একত্রে সর্টগানের ফাকা গুলি করতে করতে থানায় চলে আসি। এসে খবর পাই বোরহানউদ্দিন হাসপাতাল ও ভোলা হাসপাতালে চার জন নিহত হয়েছে।
এদিকে এঘটনায় বরিশাল রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম তাৎক্ষনিক ঘটনা পরিদর্শন করে সাংবাদিকদে বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।
উল্লেখ্যঃ- ভোলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে কুটুক্তি করার অভিযোগ উঠেছে বিপ্লব চন্দ্র শুভ নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে। শুক্রবার বিকেলে তার ইরঢ়ষড়ন ঈযধহফৎধ ঝযাঁড় নামের ফেসবুক আইডি থেকে তার ফ্রেন্ড লিস্টের বেশ কয়েক জনের কাছে আল্লাহ এবং রাসুল (সঃ) কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালাগালের ম্যাসেজ আসে। বিপ্লব চন্দ্র শুভ বোরহানউদ্দিন উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের চন্দ্র মোহন বৈদ্দের ছেলে।
জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে বিপ্লব চন্দ্র শুভ’র নিজের নাম ও ছবি সম্বলিত ফেসবুক আইডি ইরঢ়ষড়ন ঈযধহফৎধ ঝযাঁড় থেকে আল্লাহ তায়ালা ও নাবী করিম (সঃ) কে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ গালাগাল করে তার তার কয়েকজন ফেসবুক বন্ধুর কাছে ম্যাসেজ করে। এক পর্যায় কয়েটি আইডি থেকে ম্যাসেজগুলোর স্ক্রিন সর্ট নিয়ে ফেসবুকে কয়েকজন প্রতিবাদ জানালে বিষয়টি সকলের নজরে আসে। এমনকি বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর বিপ্লব চন্দ্র বোরহানউদ্দিন থানায় আইডি হ্যাক হয়েছে মর্মে জিডি করতে আসলে থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিপ্লব চন্দ্রকে তাদের হেফাজতে রাখেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ এক হ্যাকারকে আটক করে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply